ভারতবর্ষ ভক্ত-সাধক, জ্ঞানী গুণী, মহামানব, মুনি ঋষির দেশ। যুগে যুগে ভগবান অবতার গ্রহণ করে মর্ত্যে এসেছেন।লোকে সাধারণত জয়দেবের দশ অবতারের কথা জানলেও বিভিন্ন গ্রন্থে অবতারের সংখ্যা বিভিন্ন। সব অবতারের কথা সকলের জ্ঞাত নয়। রচিত এমনি এক নাম শ্রীশ্রীললিতানন্দ ব্রহ্মচারী। অবিভক্ত বাঙলায় তাঁর আবির্ভাব ১৫ই অগ্রহায়ণ ১৩২৩/ইংরাজী ৩০শে নভেম্বর ১৯১৬। হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়া মহকুমার রাজাপুর থানার অন্তর্গত রঘুদেবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন রঘুদেবপুর গ্রামে (ডাকঘর-রঘুদেবপুর-৭১১৩২২) এক সাধারণ ব্রাহ্মণ পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শ্রী হৃষীকেশ গঙ্গোপাধ্যায়, মাতা শ্রীমতী সরোজিনী দেবী। তিনি বাল্যকাল থেকে পূজাপাঠ, শাস্ত্রচর্চা করতেন। যৌবনে জ্যোতিষচর্চাও করেন। এতে তাঁর নামডাকও হয়। জ্যোতিষ জানার ফলে তিনি জানতেন তাঁর জীবন নদী কোন দিকে বইবে। সাধন ভজনে মেতে থাকতে থাকতে তাঁর মধ্যে মহাভাবের বিকাশ হয়। এই ভাবের স্থায়িত্ব আট-নয় মাস বলে জানা যায়। এই সময় থেকে তাঁর তিরোধান ২৬শে কার্ত্তিক ১৩৬৭/ ইংরাজী ১২ই নভেম্বর ১৯৬০ পর্যন্ত তাঁর যা কিছু দর্শন ও সাধনোপলব্ধি তা তিনি সঙ্গীতের মাধ্যমে প্রকাশ করতে থাকেন। তাঁর চুয়াল্লিশ বৎসর আয়ুষ্কালের শেষ দশ বৎসরে প্রকাশিত হয় “সাধনা গীতি” ও “গীতি সুধা” পুস্তক দুটি। প্রতিটি পুস্তক পাঁচ খণ্ডে বিভক্ত। প্রতি খণ্ডে একশত করে মোট এক হাজার গান লিপিবদ্ধ। এছাড়াও প্রকাশ করেন দুটি জীবনীমূলক পুস্তিকা “ শ্রীশ্রীগৌরাঙ্গ লীলামৃত” ও “শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ লীলামৃত”; প্রতিটিতে পঁচিশটি করে গান আছে। এই পুস্তক সমূহ সাধক ও গৃহী সকলের কাছে সমাদৃত হয়েছে। শুধু পড়ে গেলেও সাধনা হয়, মন প্রাণ ভক্তিরসে আপ্লুত হয় এবং ভগবৎপ্রীতি ও আনন্দময় ছন্দ অন্তরে সাড়া দেয়। এছাড়াও কিছু রচনা আছে যেগুলি তিনি প্রকাশ করে যেতে পারেননি। এ ব্যাপারে শ্রীশ্রীললিতানন্দ জানাচ্ছেন--
এখানে আমি নিজেকে প্রকাশ করে অবতীর্ণ হই বা ধর্মসংস্থাপনের জন্য আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হই--এ কথা বলা হয় নি; যিনি অবতীর্ণ হন তাঁকে ইনি পাঠিয়ে থাকেন বলা হয়েছে যা গীতার বাণীকেও ছাড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ তিনি নিজেকে ‘অবতরী’ বলেছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন, “আর একবার আসতে হবে”। “বায়ুকোণে আর একবার (আমার) দেহ হবে” (কথামৃত ভবন থেকে প্রকাশিত শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত ৪/৪৫,২৩৭)। শ্রীশ্রীললিতানন্দের এই গানটি যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী--